৫. সহ-সাধারণ সম্পাদক : মার্জিয়া লিপি

লখোলখেি জগতরে র্মাজয়িা লপিি

লেখালেখি জগতের মার্জিয়া লিপি

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চর্চা ও গবেষণা মার্জিয়া লিপির প্রিয় বিষয়। দর্শন ও দার্শনিক ব্যক্তিত্বের সমীক্ষণেও তিনি একনিষ্ঠ। লেখালেখির অনন্য জগত তৈরি করেছেন তিনি। সৃজনশীল গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছেন মার্জিয়া লিপি।
গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মার্জিয়া লিপি রচিত ‘একাত্তর মুক্তিযোদ্ধার মা’ নামের বইটি প্রকাশ করে খ্যাতনামা অবসর প্রকাশনা সংস্থা। বইটিতে গত নয় বছর ধরে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ৭১ জন মা এবং তাঁদের গর্বিত ২০৩ জন সন্তানের যুদ্ধকালীন গৌরবগাঁথা রয়েছে। মার্জিয়া লিপির এ গবেষণাটি বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চা, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণায় মাইলফলক।
তার প্রথম প্রকাশিত বই ‘আমার মেয়ে: আত্মজার সাথে কথোপকথন’ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও ‘ঈড়হাবৎংধঃরড়হ ডরঃয গু টহনড়ৎহ ঈযরষফ’ নামে প্রকাশ পেয়েছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে।
দার্শনিক-প-িত সরদার ফজলুল করিমকে নিয়ে মার্জিয়া লিপি রচিত গ্রন্থটি কেবল জীবনী নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিবৃত্ত এবং বাংলাদেশের মননশীলতার আখ্যান।
কিশোরগঞ্জ এর সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী মার্জিয়া লিপি – এসময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক, পরিবেশবিদ ও গবেষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন মার্জিয়া লিপি প্রতিটি কাজই করেন প্রচ- পরিশ্রমে এবং নিবিষ্টতায়। রচনার গভীরতায়, বিষয়ের ব্যাপকতায় ও লেখনির পারঙ্গমতায় সহজেই তিনি আকৃষ্ট করেছেন বোদ্ধা ও পাঠকের মনোযোগ।
একনিষ্ঠ পাঠক লিপির লেখক সত্ত্বা – স্বতন্ত্র স্বভাবে আলোকিত, আলোচিত পাঠকের মনভুবনে, অনবদ্য পরিশ্রমের নিরলস সাধক হিসেবে অন্যতম। তার রচনাশৈলির বৈচিত্র্যতা এবং গদ্যের ভাষাবিন্যাস পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রেক্ষিতে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রতি লিপির রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। মার্জিয়ার রচনাগুলো সমাজলিপিচিত্র হয়ে মনের ক্যানভাসে দাগ কেটে যায়। কলমের কণ্ঠস্বরে মমতা জাগায়; রচিত শিলালিপি সহজপাঠ্য বলে প্রাণ ছুঁয়ে যায়। ‘মা’ প্রত্যয়টির প্রতি লিপির গভীর মমত্বাবোধ খুঁজে পাওয়া যায় তার নানান রচনার, বইয়ের প্রকাশনায় ও সংকলনে। নিজের মাতৃত্ব যাপনকালের নিবিড় উপলব্ধিতে, একাত্তরের মহান মুক্তিযোদ্ধার মায়ের বেদনাবোধ অথবা শিল্পসাহিত্যে মা-য়ের উপস্থিতিচিত্রকে। মার্জিয়া লিপির স্পর্শকাতর মাতৃমন তার নানান রচনার নদ-নদীতে জন্ম নেয়, ভালোবাসার ঢেউ তার অবারিত স্নেহজলে স্নাত হয়।

সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও লেখালেখি: লেখালেখির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা- মা-বা বা এবং জাতীয় অধ্যাপক ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম। পরবর্তীতে কন্যা ভোর এবং স্বামী -আফতাব আহমেদ সিদ্দিকী (সূর্য) এর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা উল্লেখ্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘কারুকণ্ঠ’ আবৃত্তি সংগঠনের সদস্য হিসেবে শিল্পকলা একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘পরশপাথর’ নাটকে। মাধ্যমিক স্কুলে পড়াকালীন লেখালেখিতে তার হাতেখড়ি। এস. ভি. স্কুলের দেয়াল পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি ওই সময়টাতে বিদ্যালয়, আন্তঃ বিদ্যালয়, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। শিল্পকলা একাডেমিতে বিখ্যাত উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী ওস্তাদ পরেশ ভট্টাচার্যের কাছে সংগীত চর্চা শুরু করেন। সংগীত ছাড়াও নিয়মিত উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, নাটক বিশেষত অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। যোগ দেন হলদে পাখি এবং গার্লস গাইডে। ১৯৯২ সালে সেসময়ের বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা ‘আজকের কাগজ’ এ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়- ‘বহুতল ভবনে বেড়ে উঠছি যারা’ এবং ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এ প্রকাশিত হয় বিজয় দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্রে – ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় এবং দৈনিক ও অন লাইন পত্রিকা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাগাজিনে -পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি সংরক্ষণ, ভ্রমণ সাহিত্য ও নারী বিষয়ক বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়।
জন্মবৃত্তান্ত এবং শিক্ষাজীবন: মার্জিয়া লিপির এর জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৯৭৩ সালের ১৫ অক্টোবর। বাবা মো: মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মা ফিরোজা আক্তার। স্বামীর নাম আফতাব আহমেদ সিদ্দিকী সূর্য। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান সুমাইয়া বুশরা ভোর। গর্ভস্থ ভোরকে নিয়েই লিপির অনবদ্য – ‘আমার মেয়ে আত্মজার সাথে কথোপকথন’ দিনলিপিটি রচিত হয়েছে। শিক্ষাজীবনে নিবিড় পাঠ শুরু করেন বাড়ির পাশের নিউটাউন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরবর্তীতে সরকারী আদর্শ শিশু বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় কিশোরগঞ্জ জেলায় মেধাতালিকায় স্থান অর্জন করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। এস. ভি. সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এস.এস. সি ও এইচ,এস,সি পাশ করে রাজশাহী ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তির পর যদিও সেখানে আর পড়া হয়ে উঠেনি। উচ্চ শিক্ষার জন্যে ১৯৯২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯৫ সালে শিক্ষাবর্ষে ভুগোল ও পরিবেশ এ ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন: ¯œাতক অনার্স ডিগ্রি লাভের পরপরই তার কর্মজীবন শুরু হয়। ইউএনডিপি এর অর্থায়নে এগ্রো ইকোলজিক্যাল জোন (এইজেড) প্রজেক্টে জিআইএস অ্যানালিস্ট হিসেবে ইনফো কনসাল্ট লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন । ২০০১ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগে পরিবেশ শিক্ষাবিদ ছিলেন সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পে। পরবর্তীতে লিপি পরিবেশবিদ, বাংলাদেশ বনবিভাগ ও পরিবেশ পরামর্শক (জাতীয়) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বেপজা’য় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ইউএসএইড-এর প্রকল্পে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মার্জিয়া লিপি বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত উপস্থাপক ।

কর্মসূত্রে এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি থাইল্যা-, ইন্দেনেশিয়া, মালেয়শিয়া, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, ভুটান, নেপাল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রকৃতি পর্যটন এবং পায়ে হেঁটে পবর্ত আরোহন বা ট্রেকিং মার্জিয়া লিপির অন্যতম শখ। ২০০৩ সালে ভারতের উত্তরা লের হিমালয় পর্বতমালার ১২৬৮৮ ফুট উচ্চতায় কেদারনাথ শৃঙ্গে আরোহন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের চন্দ্রনাথ পাহাড় ১১৫২ ফুট, পশ্চিম বাংলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু ১১৯৩০ ফুট, ভুটানের টাইগার নেস্ট (১০০০০ ফুট), ইন্দোনেশিয়ার ডাইনোসর বীচ, নেপালের অন্নপূর্ণা রেঞ্জ (১৩৫০০ ফুট), কাশ্মিরের পেহেলগাঁও পীরপাঞ্জাল ও জানসার পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত টুলিয়ান লেকে (১১০০১ ফুট) তিনি ট্রেকিং করেছেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ: ২০১০ সালে মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয় গ্রন্থ – আমার মেয়ে ঃ আত্মজার সাথে কথোপকথন’। বইটির পা-ুলিপি-২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৪ এর অগাস্ট- এ নয় মাসে গর্ভস্থ ভ্রƒণকে লেখা দিনলিপি। গর্ভধারণের বিশেষ সময়ে সন্তান সম্ভাবনাময় মায়ের সঙ্গে গর্ভস্থ ভ্রƒণের কথোপকথন যা মাতৃত্বের অনুভব, শরীরের পরিবর্তন, এ দেশের ইতিহাস, রাজনীতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি, সংস্কৃতি, সংগীত, চিত্রকলা, সম্ভাবনা- এসব কিছু নিয়ে। ২০১০ সালে বই আকারে প্রকাশের পূর্বে ২০০৯ সালে প্রথম আলোর নারী মে মা দিবসে প্রকাশিত হয় বিশেষ সংখ্যায় ‘‘ আত্মজার সাথে কথোপকথন ’’ শিরোনামে।
লিপির উল্লেখযোগ্য রচনাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: আমার মেয়ে: আত্মজার সাথে কথোপকথন, ২০১০ (মাওলা ব্রাদার্স) এবং এই বইয়ের অনুবাদ ঈড়হাবৎংধঃরড়হ ডরঃয গু টহনড়ৎহ ঈযরষফ, ২০১৯ (মাওলা ব্রাদার্স), একাত্তর মুক্তিযোদ্ধার মা, ২০১৯ (অবসর প্রকাশনী), শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর, ২০২২ (তা¤্রলিপি প্রকাশনী), বাংলাদেশের উপকূল: পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, ২০১৮ (অনন্যা), মা: দুই বাংলার সাহিত্য সংকলন, ২০১৮ (অনন্যা); জীবনীগ্রন্থ : সরদার ফজলুল করিম, ২০১৭ (গদ্যপদ্য), সরদার ফজলুল করিম : দিনলিপি, ২০১৫ (মাওলা ব্রাদার্স), শিশু-কিশোর সংকলন: শিশু বিশ^কোষ, চিরদিন তোমার আকাশ, চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে’,আমরা সবাই রাজা’, ‘পাখি সব করে রব’ অন্যতম।
এছাড়াও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক জার্নাল: ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গঁষঃরফরংপরঢ়ষরহধৎু ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঊহারৎড়হসবহঃ -ঠড়ষঁসব ১ ্ ২ (ওঝঝঘ ২৫১৮-০৪০১ ্ ০৪০২ (চৎরহঃ) ঢ়ঁনষরংযবফ নু ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ঊীঢ়ষড়ৎরহম ঘধঃঁৎব ্ ঝঁংঃধরহধনষব ডড়ৎষফ.
: ট্রাভেল ই-ম্যাগাজিন- আমাদের ছুটি, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮, কলকাতা।
: মানবী, অষ্টম সংখ্যা-২০১৫, চন্দ্রিমা দত্ত সম্পাদিত, শিলচর, আসাম, ভারত।
: জাতীয় : ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’: পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (সাল- ২০১২, ’১৩, ’১৪, ’১৫, ’১৬, ২০১৮)
: ‘জাতীয় বৃক্ষমেলা সাময়িকী’: বন অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (সাল- ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯)
তিনি লেখালেখিতে অবদানের জন্যে বিভিন্ন স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার মা’ গবেষণামূলক গ্রন্থের জন্য এবং সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্জিয়া লিপি অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।।
শৈশব থেকেই মার্জিয়া লিপি সাহিত্য, সাংস্কৃতিক – সামাজিক কর্মকা- এবং প্রতিবেশ পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ২০১২ থেকে ‘‘কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু-কিশোর পাঠাগার’ এর” উপদেষ্টা। পাঠাগার আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে গঠিত “সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলন”-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাগার সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। ইমেইল:সধৎুরধষরঢ়র@মসধরষ.পড়স মোবাইল:০১৭১১৩৫৩১৪৭
তথ্যসূত্র: আবদুল্লাহ আল মোহন রচিত ভাব-অনুভব এবং বার্তা ২৪ প্রকাশিত ‘লেখালেখি জগতের মার্জিয়া লিপি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *